Monthly Archives: July 2020

নকল চার্জার বুঝবেন কিভাবে?

অনলাইন থেকে নকল ইলেকট্রিক গেজেট কেনা নিয়ে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল।এতে জানা গেছে, চারশ’ নকল চার্জারের মধ্যে মাত্র তিনটিতে বৈদ্যুতিক শক ঠেকাতে যথেষ্ট প্রতিরোধোক ব্যবহার করা হয়।যার ফলে চার্জার ব্যবহারকারীর অনেকে মারাত্মক ঝুঁকিতে আছেন বলে সতর্ক করেছেন তদন্তকারীরা।অ্যামাজনে এই সময়ে ‘নকল’ গেজেট বিক্রির ‘হিড়িক’ পড়েছে বলে অ্যাপলের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, এর পর থেকে এই পরীক্ষা চালানো হয় বলে জানা গিয়েছে।

যেভাবে চিনবেন ঝুঁকিপূর্ণ নকল চার্জার

প্লাগ পিন:

কোনো সকেটে সুইচ চালু করে আর প্লাগটি কোনো ডিভাইসের সঙ্গে কানেক্ট না করে, প্লাগের পিন সকেটে ঢুকানোর পর যদি দেখা যায় তা সঠিকভাবে খাপ খাচ্ছে না, তাহলে পিনগুলো ভুল আকারে বানানো হয়েছে বলে ধরা যেতে পারে। পিন-এর ধার আর চার্জারের ধারের মধ্যে অন্তত ৯.৫ মিলিমিটার জায়গা থাকতে হবে।

মার্কিং:

উৎপাদনকারী সংস্থাটির ব্র্যান্ড নাম বা লোগো, মডেল, ব্যাচ নাম্বার আর নিরাপত্তা নির্দেশক চিহ্ন যাচাই করতে হবে। যদিও এগুলো সহজেই নকল করা যায়, তা নিয়েও সতর্ক থাকতে হবে।

সতর্কতা ও নির্দেশনা:

ইউজারদের নির্দেশনায় শর্ত আর ব্যবহারের নীতিমালা দেওয়া থাকতে হবে।

এগুলোর মধ্যে কীভাবে নিরাপদে চার্জার ব্যবহার করতে হবে- এমন নিরাপত্তামূলক নির্দেশনা ও ব্যবহার শেষে তা নষ্ট করার উপায় বলা থাকতে হবে।

যেভাবে অ্যাপলকে দেউলিয়া হবার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল মাইক্রোসফট

অ্যাপল বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সফল একটি কোম্পানি। তাদের পণ্যের সর্বব্যাপী চাহিদার পাশাপাশি রয়েছে একটি বিশ্বস্ত ভোক্তাশ্রেণী। তাই আমেরিকান শেয়ার মার্কেটে প্রথম ট্রিলিয়ন ডলার কোম্পানি হিসেবে অ্যাপলের নাম উঠে আসা একেবারেই বিস্ময়কর কোনো বিষয় নয়। কিন্তু আজ থেকে ২০ বছর আগে অ্যাপল একসময় দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। সবচেয়ে মজার কথা হলো, এই অবস্থা থেকে অ্যাপলকে তখন স্টিভ জবস বাঁচাতে পারেননি, বরং তখন অ্যাপলকে বাঁচায় তাদেরই ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী মাইক্রোসফট!

নব্বইয়ের দশকের চিত্র

১৯৯৭ সালের দিকে অ্যাপল শুধুমাত্র কম্পিউটার প্রস্তুতকারক কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত ছিল, কেননা তখনও স্মার্টফোন আবিষ্কার হয়নি। অ্যাপল কোম্পানির নামই ছিল তখন ‘অ্যাপল কম্পিউটার’। তাদের কম্পিউটারগুলোর বাজারদর ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি, যার কারণে ব্যবহারকারীদের কাছে অ্যাপলের জনপ্রিয়তা তেমন ছিল না। অর্থাৎ সেসময়ে কোম্পানিটি ক্রমেই নিচের দিকে নেমে যাচ্ছিল।

১৯৯০ এর দিকে বেশিরভাগ কম্পিউটার ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হতো। কম্পিউটারগুলোর মূল ভিত্তি ছিল বড় বড় কোম্পানিগুলোর প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার যাতে সুন্দরভাবে চালানো যায় সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম থাকা। অর্থাৎ আপনি যে সফটওয়্যারটি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে কম্পিউটারে চালাতে চান, সেজন্য কম্পিউটারে যদি প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম তৈরি করা না থাকে, সেক্ষেত্রে বড় বড় কোম্পানিগুলোর জন্য আপনার কম্পিউটার কোনো উপকারে আসবে না।

১৯৯৭ সালে মাইক্রোসফটের শেয়ার বাজারদর অনেক বেশি ছিল এবং প্রায় সকল ধরনের সফটওয়্যার উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহারের উপযোগী করে তৈরি করা হতো। একটি কথা বলে রাখা ভাল যে, এই সময়ে স্টিভ জবস অ্যাপলের দায়িত্বে ছিলেন না। ১৯৮৫ সালে অ্যাপলের পরিচালনা পর্ষদ তাকে কোম্পানি থেকে বের করে দেয়। ১৯৯৭ সাল থেকে ক্রমেই অ্যাপলের বিক্রি কমতে থাকে এবং পাশাপাশি কমতে থাকে অ্যাপলের শেয়ারের বাজারদর। বার বার কোম্পানির সিইও পরিবর্তন করার পরও যখন অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না, তখনই অ্যাপল স্টিভ জবসকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিল।

১৯৯৮ সালে অ্যাপলের কম্পিউটার; Image Courtesy: telegraph.co.uk

১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্টিভ জবস ‘নেক্সট’ নামক কোম্পানিটি কিনে নেন। অ্যাপল ছেড়ে যাওয়ার পর তিনি নিজেই এই কোম্পানি শুরু করেন। কিন্তু অ্যাপলের অর্থনৈতিক অবস্থা তখন এতটাই শোচনীয় ছিল যে ‘নেক্সট’ কেনার জন্য তিনি কোনো নগদ অর্থ পাননি, পেয়েছিলেন অ্যাপলের ১.৫ মিলিয়ন মূল্যের শেয়ার। এতকিছুর পরও অ্যাপলের অস্তিত্ব সংকট প্রকট হয়ে উঠল জুলাইয়ের শেষের দিকে, কারণ তখন অ্যাপলের ব্যাংক একাউন্টে মাত্র ৯০ দিনেরও কম সময় চলার মতো অর্থ অবশিষ্ট ছিল। তিন বিলিয়ন ডলার মূল্যের কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও মাত্র এক বছরেই কোম্পানিটি প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

যে ঘোষণা সবাইকে হতভম্ব করে দেয়

আগস্ট মাসের ৭ তারিখ এক কনফারেন্সে স্টিভ জবস সবচেয়ে বড় বিস্ময়ের জন্ম দেন। তিনি সেই কনফারেন্সে অ্যাপলের সাথে মাইক্রোসফটের অংশীদারিত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। “যে কোম্পানি অ্যাপলকে অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দিয়েছে, তার সাথেই কীভাবে আবার অংশীদারিত্ব?“- এটাই  ছিল সাধারণ মানুষের কাছে কোটি টাকার প্রশ্ন। তিনি কনফারেন্সে বলেন,

আজ আমি আমাদের প্রথম এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন অংশীদারের কথা বলব, যে হলো মাইক্রোসফট! অ্যাপল মাইক্রোসফটের ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্রাউজারকে তাদের ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের ডিফল্ট ব্রাউজার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। পাশাপাশি মাইক্রোসফট অ্যাপলের ১৫০ মিলিয়ন মূল্যের শেয়ার বাজারদরে কেনার ঘোষণা দিয়েছে। এই শেয়ারগুলো হচ্ছে নন ভোটিং শেয়ার। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, মাইক্রোসফট তাদের অফিস পাঁচ বছরের জন্য অ্যাপলকে অবাধে ব্যবহারের সুযোগ করে দেবে।

Image Courtesy: YouTube

এখানে একটা বিষয় হচ্ছে- মাইক্রোসফট যে শেয়ারগুলো কিনেছে, সেগুলো ছিল নন-ভোটিং শেয়ার। অর্থাৎ মাইক্রোসফট অ্যাপলের অংশীদারিত্বে যাচ্ছে না, বরং তাদেরকে তহবিল দিচ্ছে শুধুমাত্র। সফটওয়্যারগুলোর অ্যাপলের ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে ব্যবহার-উপযোগীতা না থাকাই মূলত অ্যাপলকে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে দিচ্ছিল। আর তখনই বিল গেটস ম্যাকিনটোশের এই সফটওয়্যারজনিত সমস্যা দূর করেন। কিন্তু কেন তিনি এটা করলেন? যেখানে মাইক্রোসফটের হাতে তাদেরই নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর মৃত্যু হত, সেখান থেকে কেন বিল গেটস অ্যাপলকে বাঁচালেন?

কেন অ্যাপলকে সাহায্য করা?

এখন আমরা বিল গেটসকে একজন উদার এবং দানশীল ব্যক্তি হিসেবেই জানি। কিন্তু আজ থেকে ৩০ বছর আগে তিনি এমন ছিলেন না। ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য তিনি যেকোনো ধরনের উপায় গ্রহণ করতে ইচ্ছুক ছিলেন, যদিও সেটা অন্য কারো জন্য খারাপ কিছু বয়ে আনে।

ব্যবসায় সফলতার জন্য গেটসের গৃহীত পদক্ষেপগুলো মাইক্রোসফটকে সফলতা এনে দেয়। মাইক্রোসফট এতটাই সফল ছিল যে এটি তখন আমেরিকান ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের উচ্চপদস্থ নীতি নির্ধারকদের চোখে পড়ে। ১৯৯৩ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে একটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ১৯৯৮ সালে আমেরিকান ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস ‘শারমান এন্ট্রি-ট্রাস্ট অ্যাক্ট’ ভঙ্গের জন্য মাইক্রোসফটের নামে মামলা দায়ের করে। তারা অভিযোগ করে, মাইক্রোসফট একচেটিয়া বাজার দখলের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা দমন করতে চাচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে, মাইক্রোসফট সত্যিকার অর্থেই চাচ্ছিল তাদের তৈরি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্রাউজারটি যুক্ত করে দিয়ে ওয়েব ব্রাউজার ব্যবসায় একচেটিয়া বাজার দখল করতে।

মাইক্রোসফটের একচেটিয়া মনোভাব

তখনকার সময়ে ওয়েব ব্রাউজার ফ্রি ছিল না। নেটস্কেপ নেভিগেটর, অপেরার মতো ওয়েব ব্রাউজারগুলো দোকান থেকে কিনে নিতে হত। এখন মাইক্রোসফট চাচ্ছিল তাদের ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্রাউজারকে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে যুক্ত করে দিতে, যাতে করে ব্যবহারকারীদের আলাদা কোনো ওয়েব ব্রাউজার কিনতে না হয়। আর এভাবেই মাইক্রোসফট বাজারে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করবে।

মাইক্রোসফটের জয়

দীর্ঘদিনের টানা আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে তার কোম্পানিটি ভেঙে পড়ুক তা বিল গেটস একদমই চাচ্ছিলেন না। অ্যাপলকে সাহায্য করার মাধ্যমে বিল গেটস প্রমাণ করতে চাইছিলেন যে তারা একচেটিয়া ব্যবসায় বিশ্বাসী নয়, বরং তারা প্রতিযোগিতাকে সব সময় সমর্থন করে। শুনানির কিছু অংশ তুলে ধরা যাক।

প্রশ্ন: আপনি কি রিয়েল নেটওয়ার্ক এর কোন প্রতিনিধির সাথে কী ধরনের পণ্য তাদের বিতরণ করা উচিত বা উচিত নয় এ ব্যাপারে কোনো আলোচনা করেছিলেন?
বিল গেটস: (প্রায় অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর) না।
প্রশ্ন: এটা একটা প্রোগ্রাম, যা সাধারণত হিসাব-নিকাশের কাজ অথবা মজুদপণ্যের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
বিল গেটস: আমি মনে করি সংজ্ঞায়নটা অস্পষ্ট।
প্রশ্ন: যতটুকু সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ততটুকু কি যথার্থ নয়?
বিল গেটস: যথার্থ হলেও আমি মনে করি এটা এখনও অস্পষ্ট।

আদালতে বিল গেটস; Image Courtesy: New York Times

এভাবেই আদালতে শুনানির সময় বিল গেটস তার উত্তরে যথাসম্ভব কৌশলী থাকার চেষ্টা করেন, যাতে করে জুরি বোর্ড সহজে কোনো কিছু বুঝতে না পারে। তিনি জানতেন, অ্যাপলকে সাহায্য করে তিনি প্রকৃত অর্থে মাইক্রোসফটকেই বাঁচিয়ে দিয়েছেন। অ্যাপলকে সাহায্য করে মাইক্রোসফট এটাই বোঝাতে চাচ্ছিল যে, তারা একচেটিয়া কোনো কোম্পানি নয়। তিন বছর পর আদালত মাইক্রোসফটকে সামান্য শাস্তি দিয়ে মামলা থেকে মুক্তি দেয়।

নন-ভোটিং শেয়ার রহস্য

আগেই বলা হয়েছে, মাইক্রোসফট অ্যাপলের ১৫০ মিলিয়ন মূল্যের নন-ভোটিং শেয়ার বাজারদর ক্রয় করে। মামলা থেকে মুক্তির সাথে সাথেই বিল গেটস তার নন-ভোটিং শেয়ারগুলোকে সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর করেন। সব মিলিয়ে বিল গেটস অ্যাপলের ১৮.২ মিলিয়ন মূল্যের শেয়ার পান, যা তিনি ২০০৩ সালে বিক্রি করে দেন। যখন বিল গেটস শেয়ারগুলো বিক্রি করেন, তখনও অ্যাপলের শেয়ারমূল্য অনেক কম ছিল।

২০০৩ সালে অ্যাপলের শেয়ারমূল্য; Image Courtesy: YouTube

এরপর থেকে অ্যাপলের শেয়ারের বাজারমূল্য ২০০৫ সালে ২:১ অনুপাতে এবং ২০১৪ সালে ৭:১ অনুপাতে বেড়ে যায়। ২০১৯ সাল পর্যন্ত অ্যাপলের প্রতিটি শেয়ারের মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ২২৭ ডলার, সেই হিসেবে বিল গেটসের বিক্রি করে দেওয়া শেয়ারের মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ৫৭ বিলিয়ন ডলারে!

যদিও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য অর্জন করার জন্য বিল গেটস অ্যাপলকে সাহায্য করেছিলেন, তারপরও তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো যায়। নতুবা অ্যাপল নামের এই ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানিটি হয়তো দেউলিয়া হয়ে যেত।

আলোকচিত্রের ইতিহাস

ফটোগ্রাফি এল যেভাবে…

বিভিন্ন রকম আলো দিয়ে ছবি তোলা হয়। এই আলো যত দিন কোনো মাধ্যমে সংরক্ষণ করা যেত না, তত দিন কাগজে পেনসিল ঘষে ঘষে ছবি আঁকা হতো। আলো সংরক্ষণ করার এই মাধ্যম হলো ক্যামেরা।

আচ্ছা, আমরা কি খালি আলোই দেখব, নাকি আলোর সঙ্গে অন্য কিছুও দেখব। আলোর মধ্যে যদি আলো দেখি, তাহলে তো আর কিছু সংরক্ষণ করা গেল না। এই আলোকে অন্যভাবে দেখার চিন্তা থেকেই প্রথম তৈরি হয় ‘ক্যামেরা অবসকিউরা’, যা পিনহোল ক্যামেরার পূর্বরূপ। ক্যামেরা অবসকিউরা হলো একটা বদ্ধ অন্ধকার কক্ষ, যেখানে একটা সরু ছিদ্রের মাধ্যমে আলো প্রবেশ করে বিপরীত দেয়ালে আলোর প্রতিফলন সৃষ্টি করে। আরব পণ্ডিত আবু আলি-আল-আসান ইবনে আল-আসান ইবনে আল হায়থাম (৯৬৫-১০৪০ খ্রিঃ), ১০১২ থেকে ১০২১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে লেখা তাঁর বই ‘বুক অব অপটিকস’–এ (কিতাব আল-মানাযির) আলোর এই প্রতিফলনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি ‘আল বাইত আল মুথলিম’ শব্দটি তাঁর বইয়ে ব্যবহার করেন, যার অর্থ ‘অন্ধকার কক্ষ’। তিনি এটি পরীক্ষা করার জন্য একটি কক্ষ পুরো অন্ধকার করে জানালায় সরু ছিদ্র করে সূর্যগ্রহণ দেখতে পান। কিন্তু সূর্যগ্রহণের প্রতিবিম্ব ছিল উল্টো। সেই সঙ্গে সেটি ছিল চলমান প্রতিবিম্ব। 

ক্যামেরা লুসিডা এবং এর অংকন পদ্ধতি

ক্যামেরা অবসকিউরা পরবর্তীকালে বিজ্ঞানীদের কাছে সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হতে থাকে। সেই সঙ্গে এটি চিত্রশিল্পীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, যা ‘ক্যামেরা লুসিডা’ নামে পরিচিতি লাভ করে। ক্যামেরা লুসিডায় প্রিজম এমনভাবে লাগানো থাকে, যেটা চিত্রশিল্পীদের আরও নিখুঁতভাবে ছবি আঁকতে সাহায্য করে। 

এভাবে আলোকচিত্রের ধারণা উদ্ভাবন হয়। সময়ের পরিবর্তনের আলো নিয়ে নানা ধরনের পরীক্ষা হয়। পরে উনিশ শতকের শুরু দিকে জোসেফ নিপসে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে আলোকে সংরক্ষণ করতে সক্ষম হন। যে ছবিটি প্রথম সংরক্ষিত ছবি হিসেবে পরিচিত, সেটি ছিল তাঁর বাসার জানালা থেকে অন্য জানালার ছবি। টানা আট ঘণ্টার এক্সপোজার দেওয়ার কারণে এবং সূর্যের অবস্থান পরিবর্তনের জন্য বিল্ডিংয়ের দুই পাশই দেখতে পাওয়া যায়। 

নিপসে-এর সংরক্ষণ করা প্রথম ছবি

অন্যদিকে, লুইস দ্যাগুয়েরো নিজের চেষ্টায় ছবি সংরক্ষণের কাজ চালান। তাঁর প্রচেষ্টা তাঁকে পরবর্তীকালে ১৮২৯ সালে নিপসের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে ধাবিত করে। তাঁরা বিভিন্ন পরীক্ষা করতে থাকে। তারপরও ছবি একবারে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করতে পারতে ব্যর্থ হন। এরপর ১৮৩৫ সালে নিপসে মারা গেলে দ্যাগুয়েরো একাই কাজ চালিয়ে যান। তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে আট ঘণ্টার এক্সপোজার ৩০ মিনিটে নিয়ে আসেন এবং ১৮৩৭ সঙ্গে ছবি সম্পূর্ণরূপে স্থায়ী করতে সফল হন। সেই ছবির ডিটেল ছিল অতুলনীয়। পরে দ্যাগুয়েরো নিপসের ছেলের সঙ্গে চুক্তি করে সেই ক্যামেরার নাম দেন ‘দ্যাগুয়েরোটাইপ ক্যামেরা’। নিপসের ছেলে ও দ্যাগুয়েরো ১৮৩৯ সালে দ্যাগুয়েরোটাইপ ক্যামেরা ফ্রান্স সরকারের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে ওই বছর ১৯ আগস্ট ফ্রান্স সরকার আলোকচিত্রের চর্চা পুরো পৃথিবীর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। তাই ১৯ আগস্ট বিশ্ব আলোকচিত্র দিবস হিসেবে পালন করা হয়। 

দ্যাগুয়েরোটাইপ ক্যামেরা
দ্যাগুয়েরটাইপ ক্যামেরায় তোলা ছবি

দ্যাগুয়েরোটাইপ ক্যামেরার ছবি হলো ভীষণ স্পষ্ট, কিন্তু একটা বড় সমস্যা ছিল যে একটা নেগেটিভ থেকে একটা ছবি প্রিন্ট করা যেত। যেটি ছিল ওয়েট প্লেট নেগেটিভ। এই সমস্যার সম্মুখীন হন উইলিয়াম হেনরি ফক্স ট্যালবর্ট তাঁর রিসার্চের সময়। তাই তিনি নিজে আবার গবেষণা শুরু করেন এবং কাগজে ছবি তোলার চেষ্টা করেন। তিনি আলো সংবেদনশীল কাগজ তৈরি করতে সফল হন। তিনি তাঁর এই ক্যামেরার নাম দেন ‘ক্যালোটাইপ ক্যামেরা’। ক্যালোটাইপ ক্যামেরার পেপার নেগেটিভ থেকে অনেক ছবি প্রিন্ট করা যেত। কিন্তু এখানেও একটা সমস্যা ছিল। ক্যালোটাইপ ক্যামেরার ছবি বেশি স্পষ্ট ছিল না। 

ক্যালোটাইপ ক্যামেরা
ক্যালোটাইপ ক্যামেরায় তোলা ছবি

একাধারে পুরো বিশ্বে আলোকচিত্রের চর্চা শুরু হয়। মজার বিষয় হলো আলোকচিত্রের চর্চা উন্মুক্ত হওয়ার এক বছরের মধ্যেই ভারতবর্ষে আলোকচিত্রের চর্চা শুরু হয়। সেই সঙ্গে দ্যাগুয়েরোটাইপ ক্যামেরার ওপর কাজ হতে থাকে। ১৮৫০ সালে ওয়েট প্লেট নেগেটিভ থেকে ওয়েট প্লেট গ্লাস নেগেটিভ আবিষ্কৃত হয়, যার মাধ্যমে দ্যাগুয়েরোটাইপ ক্যামেরায় তোলা স্পষ্ট নেগেটিভ থেকে অনেকবার ছবি প্রিন্ট করা সক্ষম হয়। 

স্টিল ও পোর্ট্রেট ছবির পাশাপাশি আলোকচিত্র বিভিন্ন মুভমেন্ট যোগ হতে থাকে। এই মুভমেন্টের ছবি তোলার জন্য এডওয়ার্ড মুয়াইব্রিজ ১২ থেকে ২৪টি ক্যামেরা পাশাপাশি রেখে একসঙ্গে সাটার রিলিজ করে ছবি তোলেন। তাঁর এই কাজের সূত্র ধরে তৈরি হয় ‘ক্রোনফটোগ্রাফিক গান’। এই ক্যামেরা দিয়ে একসঙ্গে ১২টি করে ছবি তোলা সম্ভব হতো। 

ক্রোনোফটোগ্রাফিক গান
ক্রোনোফটোগ্রাফিক গানে তোলা ছবি

এত দিন ধরে কেউ শখে, আবার কেউ পেশা হিসেবে আলোকচিত্রের চর্চা শুরু করেন। বিশ শতকের শুরুর দিকে ‘কোডাক ব্রাউনি’ ব্যবসায়িক উদ্যোগে ক্যামেরা বিক্রি শুরু করে। বড় বক্স ক্যামেরা থেকে ক্যামেরা তখন ছোট হয়ে দুই হাতের মধ্যে চলে আসে। ক্যামেরার আকার ছোট হওয়ার পাশাপাশি ফিল্মের আকারও ছোট হতে থাকে। আলোকচিত্রে স্ন্যাপশটের যাত্রা শুরু হয়। 

কোডাক ব্রাউনি ক্যামেরা

আস্তে আস্তে ক্যামেরার আকৃতি পরিবর্তন হয়। বক্স ক্যামেরা থেকে এসএলআর ক্যামেরা হয়। অ্যানালগ ফিল্ম থেকে ডিজিটাল সেন্সর যুক্ত হয় ক্যামেরায়। আবার সেই সেন্সর ছোট হতে হতে সংযোজিত হয় মুঠোফোনে। ২০০০ সালে আবিষ্কৃত হয় প্রথম ক্যামেরা ফোন। 

এসএলআর এবং ডিজিটাল এসএলআর ক্যামেরা

বর্তমানে ক্যামেরা আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। আমাদের সবার কাছেই বিভিন্ন রকমের ক্যামেরা রয়েছে, যা আমাদের নানা স্মৃতি ধারণ করতে সাহায্য করে। আমরা চাইলে ছবি তুলে নিজের কাছে রেখে দিতে পারি, আবার প্রিন্ট করে সাজিয়ে রাখতে পারি। আমাদের জীবনের একটা বড় অংশে জড়িয়ে আছে এই ক্যামেরা। 

সূত্র: ব্রিটানিকা, হিস্ট্রি অব ইনফরমেশন, ইবনে আল হায়থাম ডট কম ও স্প্রাস ক্র্যাফটস

দুনিয়া কাঁপানো জাহাজ গুলো

বিভিন্ন দেশের পোর্টের আশেপাশের শপিং সেন্টার গুলোতে গেলে কিছু দোকানে চোখে পড়তো পুরনো জাহাজের ছোট ছোট মডেল। পাল তোলা বা অনেক দড়িদড়া দিয়ে সাজানো মাস্তুল দেখলেই মাথা নষ্ট। এদের মধ্যে কতগুলো জাহাজের বক্সে আবার এর পুরো ইতিহাস লেখা। পৃথিবী কাঁপানো বিখ্যাত সেই জাহাজ গুলো নিয়েই এই পোস্ট।

০। সান্তা মারিয়া (The Santa Maria):


মাত্র ৭০ ফিট লম্বা এই কাঠের জাহাজটির বিখ্যাত হওয়ার কি কারন থাকতে পারে?? কচ্ছপের চেয়েও ধীর গতির এই স্প্যানিশ জাহাজটির বিখ্যাত হওয়ার কারন মিস্টার ক্রিস্টোফার কলম্বাস।


এই সেই বিখ্যাত জাহাজ যেটাতে চড়ে বেচারা ভারত আসতে গিয়ে আমেরিকা চলে গিয়েছিলেন। তুমুল ভাবে জনপ্রিয় হওয়া জাহাজটি ১৪৯২ সালের ক্রিসমাস ডে তে এগ্রাউন্ড হয়ে যায়। পরে এর উন্নতমানের কাঠের জন্য আবার একে উদ্ধার করা হয় এবং নতুন জাহাজ “লা নাভিদাদ ক্রিসমাস” (La Navidad—Christmas—) তৈরি করা হয়।


এই জাহাজটির প্রকৃত প্ল্যান কারো কাছেই পরে পাওয়া যায়নি। কিন্তু জাহাজের বাইরের চেহারা অনুকরন করে আরও অনেক জাহাজ তৈরি করা হয়।

৯। সি এস এস হানলি (C.S.S. Hunley):
এটি একটি আত্মঘাতী সাবমেরিন। নিজের লোকদের হত্যার জন্য বিখ্যাত। নাভাল আর্কিটেকচারের ইতিহাসকে এই ডুবোজাহাজ নতুন ভাবে লিখতে সাহায্য করেছে।


১৮৬৩ সালে কনফেডারেটদের প্রকৌশলী এইচ এল হানলি জাহাজটির ডিজাইন করেন এবং তৈরিও করেন। টার্গেট দক্ষিণ উপকূলে থাকা ইউনিয়নের জাহাজদের ধ্বংস করা। (কনফেডারেট আর ইউনিয়ন হচ্ছে তৎকালীন আমেরিকার গৃহযুদ্ধের দুই পক্ষ।) কিন্তু টেস্ট ম্যানুভারের সময়ই দুইবার দুর্ঘটনার শিকার হয়ে এর ১৩ জন ক্রুয়ের প্রাণহানি ঘটায়। এমনকি জাহাজটির ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার হানলি ও এই দুর্ঘটনায় মারা যান। ১৮৬৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি একে পাঠানো হয় জীবনের প্রথম অপারেশনে। বিশালাকার টর্পেডো নিয়ে হাউসাটনিক (Housatonic ) নামক জাহাজ কে ডুবাতে সফল হয় সি এস এস হানলি। হাউসাটনিক (Housatonic) ইতিহাসের প্রথম দুর্ভাগা জাহাজ যা সাবমেরিনের আঘাতে নিহত (!) হয়। সফল অপারেশন শেষ করে সি এস এস হানলি যখন ফিরছিল তখন ই তৃতীয় এবং শেষ বারের মত কোন এক অজানা কারনে ডুবে যায় এবং ৮ জন ক্রুয়ের মৃত্যু ঘটে।


চার্লসটন হারবারের পানির নিচে ১৩৬ বছর কাটানোর পর ২০০০ সালের আগস্টে একে টেনে তোলা হয়। বর্তমানে জাহাজ নিয়ে যখন বিভিন্ন সমুদ্রের সাবমেরিন এক্সারসাইজ এলাকা দিয়ে যাই তখন পানির নিচ থেকে উঁকিঝুঁকি মারা ডুবোজাহাজ গুলো দেখলে মিস্টার হানলির কথা অবশ্যই মনে পড়বে। প্রত্যেক সফলতার পিছনে থাকে একজন মানুষের বিশাল আত্মত্যাগ।

৮। ইউ এস এস মনিটর এবং সি এস এস ভার্জিনিয়া (USS Monitor And CSS Verginia):
জাহাজ দুইটি পত্রিকার শিরোনাম হয়ে উঠে বিশ্বের প্রথম লোহার তৈরি দুইটি জাহাজের যুদ্ধের জন্য।


১৮৬২ সালের মার্চ মাসে কয়েক ঘণ্টার এই যুদ্ধটি ভার্জিনিয়াতে সংগঠিত হয় কিন্তু শেষ হয় ড্রয়ের মাধ্যমে। তৎকালীন ইউনিয়নের তৈরি মনিটর তখনকার সময়ের সবচে আধুনিক যুদ্ধ জাহাজ ছিল যাতে ছিল ঘূর্ণায়মান গানটারেট। ১৮৬২ সালের শেষদিকে কেপ হ্যাটারাসে ১৬ জন ক্রু সহ দুর্যোগপূর্ণ সমুদ্রে ডুবে যায় এটি।


অন্যদিকে একই বছর কনফেডারেটরা নিজেদের তৈরি সি এস এস ভার্জিনিয়া কে বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেন যখন শত্রুপক্ষ একে ঘিরে ফেলে। এই দুইটি জাহাজের বিভিন্ন অংশ পরবর্তীতে সমুদ্রগর্ভ থেকে উদ্ধার করা হয় এবং বর্তমানে ভারজিনিয়ার মেরিনার্স মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।

৭। ইউ এস এস কন্সটিটিউশন (USS Constitution):
ম্যাচাচুসেটসের বোস্টন মিউজিউয়াম হিসেবে জন্মের ২১৩ বছর পরেও এখনো বেঁচে আছে এবং ভেসে আছে ইউ এস এস কন্সটিটিউশন।


বলা হয়ে থাকে জাহাজটির কীল বা তলা বাদে সবকিছুই অনেক বার করে বদল করা হয়েছে। কিন্তু পুরনো তলাটি এখনো অক্ষত। ১৭৯৭ সালের জাহাজ এটি। আমেরিকার সিভিল ওয়ারেও কাজে লাগানো হয় একে। প্রথম বারবারি ওয়ার (পাইরেটদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ) এবং ১৮১২ সালের যুদ্ধে নিজের নতুন পরিচয় স্থাপন করে USS COSTITUTION. ব্রিটিশ ফ্রিগেট HMS Guerriere আর HMS Java কে সম্মুখ যুদ্ধে পরাজিত করে। এগুলো ছিল রয়েল নেভির গৌরব।


১৮৮১ সাল পর্যন্ত নোনা পানিতে রানীর মত বিচরণ করে জাহাজটি। সবচে বড় আর শক্তিশালী জাহাজের খ্যাতির কারনে পচে যাওয়ার বদলে ১৯০৭ সাল থেকে সুযোগ পায় মিউজিয়াম হিসেবে কাজের। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে এটি এখনো আমেরিকান নেভির একটি কমিশন্ড যুদ্ধজাহাজ যাতে ৬০ জন নৌ সেনা কর্মরত আছে।

৬। ইউ এস এস মিসৌরী (USS Missouri):
নাহ। এই জাহাজটি কোন বড় সমুদ্র যুদ্ধে অন্য কোন জাহাজের মুখোমুখি যুদ্ধে অংশগ্রহন করে নি। কিন্তু আমেরিকান নেভির কাছে দ্যা মাইটি মো নামে পরিচিত এই জাহাজটি।


এটি সেই বিখ্যাত জাহাজ যাতে ১৯৪৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আত্মসমর্পণ দলিল স্বাক্ষরিত হয়। ৪৫ হাজার টনি এই যুদ্ধ জাহাজ টি শুধুই এজন্য বিখ্যাত নয়। যুদ্ধের পর ডিকমিশন্ড জাহাজটিকে আবার পুনরুজ্জিবিত করা হয় ১৯৮৪ সালের কোরিয়ান যুদ্ধে। সে সময় রোনালড রিগানের ৬০০ রণতরীর একটি ছিল সে। ১৯৯১ সালের পারসিয়ান গালফের যুদ্ধেও দেখা যায় একে।


বর্তমানে পার্ল হারবারে দিন যাপন করছে জাহাজটি। কাজ করছে ওয়ার মেমোরিয়াল এবং মেরিন মিউজিয়াম হিসেবে। জাহাজটিকে এমন জায়গায় নোঙ্গর করা হয়েছে যেন এর ডেক থেকে যুদ্ধজাহাজ অ্যারিজোনার (২ নম্বর বিখ্যাত) ধ্বংসাবশেষ চোখে পড়ে।

৫। এইচ এম এস ভিক্টরি (HMS Victory):
১৮ শতকের শেষের দিকে রয়েল নেভির গর্বের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় HMS Victory.


এটি বিশ্বের সবচে বড় কাঠের তৈরি যুদ্ধ জাহাজ। অনেক স্প্যানিশ এবং ফ্রেঞ্চ জাহাজের ভরাডুবির কারন হয়ে উঠে জাহাজটি। অসাধারণ নৈপুণ্য দেখায় ১৮০৫ সালের বিখ্যাত ট্রাফালগারের যুদ্ধে সংযুক্ত ফ্রেঞ্চ এবং স্প্যানিশ ফ্লিটের বিরুদ্ধে। ১৯২২ সাল থেকে যুদ্ধ থেকে অবসরে।


সংগৃহীত এবং ব্যবহৃত হচ্ছে ইংল্যান্ডের পোর্টসমাউথ মিউজিয়াম হিসেবে। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন জাহাজ যা এখনো ভাসমান।

৪। ইউ এস এস মেইন ( Battleship USS Maine):
কিছু জাহাজ বিখ্যাত হয় কি করেছে তার জন্য নয়। বরং কি দেখিয়েছে তার জন্য।;)


যুদ্ধজাহাজ মেইন হচ্ছে তেমনই একটি জাহাজ। দেখতে ছোটখাটো নিরীহ জাহাজ ছিল এটি। ১৮৯৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী হাভানা হারবারের অগভীর জলে নোঙ্গরে থাকা অবস্থায় এক রহস্যময় বিস্ফোরণে দুই টুকরা হয়ে যায় জাহাজটি আর ৩৫৫ জন ক্রুয়ের ৮৯ জনের অকাল মৃত্যুর কারন হয় এটি। আজও জানা যায়নি সেই রহস্য। ন্যাভিগেশনাল হ্যাজার্ড হিসেবে বিবেচিত হয়ে অনেক ঝুট ঝামেলা করে হাভানা হারবারের কাদা থেকে টেনেটুনে তোলা হয় একে। তারপর পূর্ণ সামরিক মর্যাদা :P দিয়ে গভীর সমুদ্রে ফেলে আসা হয়।


পিচ্চি যুদ্ধজাহাজটা আসলে যা করেছে তার চেয়ে বেশি ভুগিয়েছে।:-* আর এজন্যই আলোচিত আর বিখ্যাত।

৩। জার্মান যুদ্ধজাহাজ বিসমার্ক (Battleship Bismarck):
আপনি যদি এজ অফ এম্পায়ার বা এম্পায়ার আর্থ খেলে থাকেন এবং জার্মান নৌবাহিনীর পক্ষে বা বিপক্ষে খেলে থাকেন তাহলে অবশ্যই বিসমার্কের নাম শুনেছেন।


ব্রিটিশদের মনে আর কোন যুদ্ধজাহাজ এতটা ভয় ধরাতে পারেনি যতটা ধরিয়েছে এই জার্মান বিসমার্ক। ৮২৩ ফিট লম্বা আর ৩০ নট সার্ভিস স্পীড সম্পন্ন জাহাজটি ছিল তখনকার সময়ের সবচে বড় আর দ্রুতগতিসম্পন্ন জাহাজ। বিসমার্ক ছিল হিটলারের গর্ব আর একে সমুদ্রের তলা স্পর্শ করানো ছিল ব্রিটিশ রয়েল নেভির অন্যতম চ্যালেঞ্জ। ১৯৪১ সালের ২৪ মে সকালে ব্রিটিশ রয়েল ক্রুজার HMS Hood এবং নতুন তৈরি ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ HMS Prince of Wales সম্মিলিত ভাবে বিসমার্ক কে আক্রমন করে বসে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই দৈত্যাকার Hood বিস্ফোরিত হয়ে তলিয়ে যায়। এর ১৪১৮ জন ক্রুয়ের মধ্যে তিনজন মারা যায়। অন্য বড় এবং নতুন জাহাজ প্রিন্স অব ওয়ালেস তখন আহত হয়ে বাসায় ফেরত যায়। পরবর্তীতে ব্রিটিশ এরিয়াল টর্পেডো দ্বারা ব্যাপক ধ্বংসের শিকার হয় বিসমার্ক।


রিপেয়ারের জন্য ফ্রান্সের উপকূলে রওনা হয় সে। কিন্তু পিছু ধাওয়া করা ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ the Rodney এবং King George V এর সম্মিলিত আক্রমনে ডুবে যায় হিটলারের গর্ব। ২২০০ ক্রুয়ের মধ্যে ২০০ জনই মারা যায়।


বিসমার্ক জাহাজটির মডেল রেপ্লিকা সম্ভবত যুদ্ধজাহাজদের মধ্যে সবচে বেশি বিক্রি হওয়া রেপ্লিকা।

২। ইউ এস এস অ্যারিজোনা (USS Arizona):
একটু আগে মিসৌরির ডেক থেকে যে জাহাজটিকে দেখছিলেন এটিই সেই ইউ এস এস অ্যারিজোনা।


আমেরিকানদের আবেগকে নাড়িয়ে দেয়া জাহাজ এটি। ৭ ডিসেম্বের ১৯৪১ সালে পার্ল হারবারে জাপানীদের আকস্মিক কিন্তু নির্ভুল আক্রমনের শিকার হয়ে মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই ডুবে যায় জাহাজটি।


ওয়াল সাইডেড বোমা দিয়ে জাহাজের সম্মুখ ভাগের গোলাবারুদ রাখার জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ১৪০০ জন ক্রুয়ের মধ্যে জাহাজটির ক্যাপ্টেন এবং এডমিরাল সহ ১১৭৭ জন প্রাণ হারায়। এর ধ্বংসাবশেষ কয়েকদিন ধরে জ্বলেছিল। জ্বালিয়েছিল আমেরিকানদের মনকেও। ওই আক্রমনে ক্ষতিগ্রস্ত ৩ টি জাহাজকে আর কখনই রিপেয়ার করানো সম্ভব হয়নি।


এখনো আমেরিকানদের গর্ব আর ত্যাগের প্রতীক হয়ে মেমোরিয়াল হিসেবে সংরক্ষিত আছে পার্ল হারবারে।

১। আর এম এস টাইটানিক (RMS Titanic):
এত বড় তালিকায় আপনি অবশ্যই টাইটানিককে খুঁজবেন। আর কোন জাহাজ এর মত এত সাড়া ফেলতে পারেনি।


অবশ্য এর অধিকাংশ কৃতিত্ব অবশ্যই জেমস ক্যামেরনের তা আপনি স্বীকার না করলেই নয়। ব্রিটিশ হোয়াইট স্টার লাইনারের তৈরি এই জাহাজ সম্পর্কে আপনারা অনেকেই আমার চেয়েও ভালো জানেন। তাই নতুন আর কী তথ্য দিব? তবে এই দুর্ঘটনার ফলে মেরিন সেক্টরে ব্যাপক পরিবর্তন হয়। নতুন নতুন রুলস রেগুলেশন জারি করে তা বাধ্যতামূলকভাবে প্রয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৮৫ সালে এর ধ্বংসাবশেষ ডুবার জায়গা থেকে তিন মাইল দূরে পুনরায় আবিস্কার করা হয়।

আরও কিছু ইতিহাস বিখ্যাত জাহাজ যাদের রেপ্লিকা মডেল চোখে পড়েঃ

Battleship Potemkin :


রাশিয়ান যুদ্ধজাহাজ। ১৯০৫ সালে রাশিয়ার বিপ্লবে প্রথম গোলা নিক্ষেপকারী জাহাজ হিসেবে বিখ্যাত।

HMS Bounty:


ব্রিটিশ ফ্রিগেট। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিদ্রোহী হয়ে উঠার জন্য বিখ্যাত।

HMS Endeavor :


সর্বপ্রথম প্যাসিফিক ওসেন পাড়ি দেয়া ক্যাপ্টেন কুকের বিখ্যাত জাহাজ।

Mayflower :


এর রেপ্লিকাও অনেক বেশি চোখে পড়ে। ১৬২০ সালে ম্যাচাচুসেটসে পর্যটকদের ফিরিয়ে আনার জন্য বিখ্যাত জাহাজ।

U.S.S. Enterprise :


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে সুসজ্জিত যুদ্ধজাহাজ।

RMS Lusitania :


আমেরিকানদের প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণের পিছনে এর ডুবে যাওয়াকে প্রভাবক হিসেবে ধরা হয়। অবশ্য আমেরিকানরা যেই যুদ্ধবাজ জাতি ঐটা না ডুবলেও লাফায়া লাফায়া যুদ্ধে যাইত।

Japanese Battleship Yamato :


এখন পর্যন্ত তৈরি সবচে বড় যুদ্ধজাহাজ।

Golden Hind :


১৫৭৭ থেকে ১৫৮০ সালের মধ্যে পুরো পৃথিবী ঘুরে আসা স্যার ফ্রান্সিস ড্রেক এর জাহাজ

এখনো পরীক্ষার চাপে আছি। সাহস করে অনেক খাটাখাটনি করে পোস্টটা ফুটাইলাম। আপনাদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা, বিরক্ত লাগা সব জানাবেন। কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

 ভালো থাকবেন সবাই।

                                                          ছবি ও তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট

সমুদ্রে ভাসমান প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণে নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার

প্লাস্টিকের ব্যবহার আমাদের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমরা প্লাস্টিকের তৈরি পাত্র বা বোতল ব্যবহার না করে পারি না।বাণিজ্যিকভাবে প্লাস্টিকের ব্যবহার আরও অনেক বিশাল পরিসরে হয়ে থাকে। প্রতিবছর আনুমানিক ৩০০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে নিক্ষেপ করা হয়। এই বিশাল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য দীর্ঘদিন পরেও পরিবেশের সাথে মিশে যায় না, কেমক্যালি অপরিবর্তি থাকে যা পরিবেশের জন্য খুবই মারাত্মক। গবেষকদের মতে প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ সাগরে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে; যেগুলো দুর্ভাগ্যবশত যদি এক জায়গায় জমে যায় তবে পৃথিবীর পরিবেশে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসবে। তাহলে কেন এই বিশাল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে না? আপনাদের মনে এমন প্রশ্ন জাগতে পারে এটা স্বাভাবিক। এর উত্তরটাও স্বাভাবিক। এত বিশাল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ করার জন্য দরকার খুবই উন্নত প্রযুক্তি এবং বিশাল পরিমাণ অর্থ।

তবে আশার খবর জানিয়েছে ২০ বছর বয়সী এক যুবক। তার মতে সমুদ্র থেকে এই বিশাল বর্জ্য সরাতে তিনি তৈরি করেছেন একটি যন্ত্র। তিনি এই যন্ত্র এমনভাবে ডিজাইন করেছেন যা সমুদ্রে ভেসে থাকবে এবং সাথে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের সাথে সামাঞ্জস্য বজায় রেখে ভাসমান অন্যান্য পদার্থকে সহজে কুড়িয়ে নেবে। তার এই ডিজাইন করা ২০০০ মিটার লম্বা ডিভাইস বা যন্ত্রটি হবে সমুদ্রে ভাসমান সবচেয়ে বড় অবকাঠামো। ২০১৬ সালে জাপানের উপকূল থেকে এই যন্ত্রের কর্মযাত্রা শুরু হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এবং জাপানেই কমপক্ষে ২ বছর ধরে এই অভিযান চলবে। সমুদ্রে ভাসমান বর্জ্য পদার্থ পরিষ্কার করা বর্তমানে মানবজাতির জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০ বছর বয়সী যুবকের এই আবিষ্কার সফল হলে অদূর ভবিষ্যতে মহাসাগরগুলোতে ভাসমান বর্জ্য সরাতে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হবে বলে আগাম বার্তা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তবে নতুন এই প্রযুক্তির পরিকল্পনা সমুদ্রের বর্জ্য সরানোর প্রথম উদ্যেগ নয়। “The mega Expedition” নামে একটি প্রজেক্ট ইতিমধ্যেই হাতে নেওয়া হয়েছে। 23 আগস্ট 2015 মাসেই চালু হবে এই প্রজেক্ট। হাওয়াই এবং ক্যালিফোর্নিয়ার মাঝামাঝি সামুদ্রিক এলাকায় প্রায় ৩৫ লক্ষ বর্গকিলোমিটার জুড়ে ৫০টি বিশাল আকৃতির পাত্র ভাসানো হবে যেগুলো সমুদ্রের পানিতে ভাসমান যেকোন পদার্থকে কুড়িয়ে সংগ্রহ করবে। এর ফলে মাত্র তিন সপ্তাহেই বিগত ৪০ বছরে সংগৃহীত বর্জ্যের সমপরিমাণ বর্জ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।