Daily Archives: July 27, 2020

দেশের মানুষ

কী চমৎকার দেখা গেল

‘আআআ…রে, কী চমৎকার দেখা গেল/ নজর করে দেখো ভালো/ গাঁয়ের বধূ নাইওর এল/ তার পরেতে দেখা গেল/ যমুনায় পানি এল/ কী চমৎকার দেখা গেল/ সরকারবাড়ি ভাইসা গেল/ কুতুব মিনার হেলে গেল/ এই বারেতে দেখেন ভালো/ ঢাকা শহর দেখা গেল/ শেখ মুজিবুর আইসা গেল/ একাত্তরের যুদ্ধ হলো…।’

বায়োস্কোপ দেখাচ্ছেন নেফাজ আলী।

এক হাতে বায়োস্কোপের শলাকা ঘোরাচ্ছেন, অন্য হাতে কাঠের খঞ্জনি বাজাতে বাজাতে সুর তুলছেন নেফাজ আলী। কাঠের বক্সের সামনের অংশে কাচ বসানো ছয়টি মুখের ঢাকনায় তখন একচোখা হয়ে মুগ্ধ ছয় খুদে দর্শক।

বায়োস্কোপওয়ালা নেফাজ আলী। এভাবেই সুর-ছন্দে হেলেদুলে নেচে বায়োস্কোপ দেখাচ্ছেন ৬৩ বছর ধরে। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি, দেখা হয়েছিল বগুড়া শহরে এক বৈশাখী মেলায়। নেফাজ আলী বললেন, ‘এই বায়োস্কোপের বয়স ১৩৩ বছর। চাচাজানের কাছে ছিল ৭০ বছর; আমার কাছে আছে ৬৩ বছর ধরে।’ বায়োস্কোপওয়ালা নেফাজ আলী সন্তানের মতোই দরদ দিয়ে আগলে রেখেছেন বাক্সটি। এই বায়োস্কোপ দেখানোর রোজগারেই সংসার চলে তাঁর।

শুরুটা তাঁর চাচার হাত ধরে; তখন বয়স সবে ১১ বছর। চাচা গেদা বয়াতি এলাকার পথঘাট-অলিগলি ঘুরে বায়োস্কোপ দেখাতেন। চাচার পিছু পিছু ঘুরতেন তিনি। গ্রামগঞ্জে বায়োস্কোপ দেখিয়ে বাড়ি ফেরার পথে নেফাজকে গঞ্জের দোকান থেকে একটা লজেন্স আর এক আনার লই মিঠাই কিনে দিতেন গেদা বয়াতি। চাচা মারা গেলে সেই বায়োস্কোপই দেখানো শুরু করেন নেফাজ আলী। এখনো সে বায়োস্কোপই তিনি বয়ে বেড়াচ্ছেন।

বায়োস্কোপওয়ালা নেফাজ আলী

নেফাজ আলী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর গ্রামের অলিগলি ঘুরে বায়োস্কোপ দেখাতাম। পর্দায় তখন দেখানো হতো মুক্তিযুদ্ধের দৃশ্য। সেই দৃশ্য দেখতে বায়োস্কোপের সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়ত ছেলে-বুড়োরা। বায়োস্কোপ শেষ হলে আবেগে চোখ মুছত। লোকজন খুশি হয়ে ধান, চাল, ডালসহ খেতের শস্য ঢেলে দিত। চারদিকে তখন এই বায়োস্কোপের কত কদর। এখন দিন পাল্টেছে। তেমন দর্শক মেলে না।’

তবু জীবিকার প্রয়োজনে, কাঠের এই বাক্সটার প্রতি ভালোবাসার টানে বায়োস্কোপ নিয়ে পথে পথে ঘোরেন। গ্রামে-গঞ্জে যান। বৈশাখী মেলায় ডাক পড়ে। মেলায় এলে রোজগার কিছুটা ভালো হয়। বায়োস্কোপের আয় দিয়েই ছোট আট বোন আর দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। নেফাজ বলেন, ‘৬৩ বছরে দর্শক বদলেছে। বদলায়নি শুধু এই বায়োস্কোপ। তবে আগে টিনের মুখ ছিল, এখন তার বদলে স্টিলের তৈরি শিশুদের টিফিন বক্স কেটে মুখে বসিয়েছি।’

এক বায়োস্কোপওয়ালার জীবনকাহিনি নিয়ে তৈরি বাপজানের বায়োস্কোপ ছবিটি সিনেমা হলে গিয়ে দেখেছেন নেফাজ আলী। ছবিটা দেখে নাকি তাঁর নিজের গল্প বলেই মনে হয়েছে। এমন কথোপকথনের ফাঁকেই নেফাজ আলীর বায়োস্কোপের সামনে দর্শকের ভিড় বেড়ে গেল। বায়োস্কোপওয়ালা হেলেদুলে গাইতে শুরু করলেন, ‘কী চমৎকার দেখা গেল/ রহিম রূপবান আইসা গেল/ ঢাকার শহর দেখেন ভালো/ কী চমৎকার দেখা গেল…।’

অভীক আনোয়ার: বিদেশের মাটিতে রেস জয়ী প্রথম বাংলাদেশী

সম্প্রতি ভক্সওয়াগন এমিও কাপের প্রথম দুটি রাউন্ডে রেস জিতেছেন বাংলাদেশী অভীক আনোয়ার। দেশের বাইরে কোন বাংলাদেশীর এটিই প্রথম রেস জয়।

ব্যয়বহুল এই খেলা এখনো বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। নেই প্রশিক্ষণের সুবিধাও।

তারপরও কীভাবে তিনি একজন পেশাদার রেসার হয়ে উঠেছেন 

হাতে স্টিয়ারিং হুইল, পায়ের নিচে ব্রেক। তীব্র গতিতে ছুটছে গাড়ি। এর চেয়ে রোমাঞ্চ আর কীই–বা হতে পারে। আর সেই রোমাঞ্চই ছোটবেলা থেকে পেয়ে এসেছেন তৌহিদ আনোয়ার। ফর্মুলা রেসের আন্তর্জাতিক জগতে অভিক আনোয়ার নামে পরিচিত বাংলাদেশের এই মোটর রেসার। গত আগস্টে মালয়েশিয়ার ফর্মুলা ওয়ান ট্র্যাক সেপাং আন্তর্জাতিক সার্কিটে জিতেছেন ব্রোঞ্জপদক। বাংলাদেশের প্রথম রেসার হিসেবে আন্তর্জাতিক পদক মঞ্চে উঠেছেন অভিক আনোয়ার। মালয়েশীয় চ্যাম্পিয়নশিপ সিরিজের চতুর্থ রাউন্ডের দ্বিতীয় রেসে ৪৮ দেশের প্রতিযোগীদের মধ্যে তৃতীয় হয়েছিলেন মুন্সিগঞ্জের এই যুবক।

স্বপ্নের শুরু যেভাবে

বাবা আনোয়ার হোসেনের গাড়ির ব্যবসা। ছোটবেলা থেকেই নানা ব্র্যান্ডের গাড়ি দেখে বড় হয়েছেন। প্রায়ই বাবার দোকানে গিয়ে গাড়ি ছুঁয়ে দেখতেন। তখনই শখ জাগে গাড়ি নিয়ে ভিন্ন কিছু করার। এরপর বাবাকে না জানিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে গাড়ি চালনা শেখেন। ওই সময় টিভিতে দেখতেন ফর্মুলা ওয়ান রেসিং। চোখের নিমেষে বিশ্বখ্যাত রেসার মাইকেল শুমাখার, মিকা হাকিনেনদের ছুটে চলা দেখতেন। তাঁদের দেখেই একদিন স্বপ্ন জাগে গাড়িতে গতির ঝড় তোলার।

ঢাকার গুলশানে অভিকের গাড়ির দোকান। ৪ সেপ্টেম্বর সেখানে বসে অভিক বলছিলেন, ‘আমি তখন নিয়মিত ফর্মুলা ওয়ান দেখতাম। মাইকেল শুমাখারের রেসিং দেখে একদিন মনে হলো, আহা, যদি আমিও এমন করে ছুটতে পারতাম। সেই থেকে শুরু।

অভিক আনোয়ার। ছবি: সংগৃহীত

হাতে স্টিয়ারিং হুইল, পায়ের নিচে ব্রেক। তীব্র গতিতে ছুটছে গাড়ি। এর চেয়ে রোমাঞ্চ আর কীই–বা হতে পারে। আর সেই রোমাঞ্চই ছোটবেলা থেকে পেয়ে এসেছেন তৌহিদ আনোয়ার। ফর্মুলা রেসের আন্তর্জাতিক জগতে অভিক আনোয়ার নামে পরিচিত বাংলাদেশের এই মোটর রেসার। গত আগস্টে মালয়েশিয়ার ফর্মুলা ওয়ান ট্র্যাক সেপাং আন্তর্জাতিক সার্কিটে জিতেছেন ব্রোঞ্জপদক। বাংলাদেশের প্রথম রেসার হিসেবে আন্তর্জাতিক পদক মঞ্চে উঠেছেন অভিক আনোয়ার। মালয়েশীয় চ্যাম্পিয়নশিপ সিরিজের চতুর্থ রাউন্ডের দ্বিতীয় রেসে ৪৮ দেশের প্রতিযোগীদের মধ্যে তৃতীয় হয়েছিলেন মুন্সিগঞ্জের এই যুবক।

স্বপ্নের শুরু যেভাবে

বাবা আনোয়ার হোসেনের গাড়ির ব্যবসা। ছোটবেলা থেকেই নানা ব্র্যান্ডের গাড়ি দেখে বড় হয়েছেন। প্রায়ই বাবার দোকানে গিয়ে গাড়ি ছুঁয়ে দেখতেন। তখনই শখ জাগে গাড়ি নিয়ে ভিন্ন কিছু করার। এরপর বাবাকে না জানিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে গাড়ি চালনা শেখেন। ওই সময় টিভিতে দেখতেন ফর্মুলা ওয়ান রেসিং। চোখের নিমেষে বিশ্বখ্যাত রেসার মাইকেল শুমাখার, মিকা হাকিনেনদের ছুটে চলা দেখতেন। তাঁদের দেখেই একদিন স্বপ্ন জাগে গাড়িতে গতির ঝড় তোলার।

ঢাকার গুলশানে অভিকের গাড়ির দোকান। ৪ সেপ্টেম্বর সেখানে বসে অভিক বলছিলেন, ‘আমি তখন নিয়মিত ফর্মুলা ওয়ান দেখতাম। মাইকেল শুমাখারের রেসিং দেখে একদিন মনে হলো, আহা, যদি আমিও এমন করে ছুটতে পারতাম। সেই থেকে শুরু।’

লড়াইটা নিজের সঙ্গে

বাংলাদেশে মোটরদৌড়ের কোনো জায়গা মানে রেসিং ট্র্যাক নেই। নেই কার রেসিংয়ের প্রশিক্ষকসহ অন্য সুযোগ-সুবিধাও। কিন্তু তাই বলে থেমে থাকেননি অভিক আনোয়ার। প্লে স্টেশনের গেম আর সিমুলেটর ছিল ভরসা। প্লে স্টেশনে খেলতেন গ্রান ট্যুরিসমো স্পোর্ট। বন্ধুরা প্রায়ই হাসাহাসি করতেন আর বলতেন, ‘এসব অবাস্তব গেম খেলে কী হবে?’ বন্ধুদের বোঝাতেই পারতেন না যে এই খেলার সঙ্গে বাস্তবে গাড়ি চালানোর কতটা মিল রয়েছে। শেষ পর্যন্ত ২০০৭ সালে কানাডায় উচ্চতর পড়াশোনার জন্য গেলে সেখানেই মেলে অনুশীলনের সুযোগ।

পিৎজার দোকান থেকে রেসিং ট্র্যাকে

কার রেসিং একটি ব্যয়বহুল খেলা। অনুশীলন করতেও প্রয়োজন মোটা অঙ্কের অর্থ। সেই টাকা হয়তো অভিক তাঁর বাবার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা নেননি। কানাডায় পড়াশোনার ফাঁকে কাজ করতেন পিৎজা সরবরাহের। কখনো রেস্তোরাঁর সবজি কেটেছেন, কখনো লাইব্রেরিতে করেছেন খণ্ডকালীন চাকরি। এসব কাজ করে জমানো টাকা দিয়ে গাড়ি কেনেন। কানাডার অনুশীলন ট্র্যাকে গিয়ে নিয়মিত চর্চা করতেন। অনুশীলন করতে করতেই কার রেসিংয়ে নিজের সম্ভাবনাও আঁচ করেন অভিক। এরপর ২০১২ সালে পড়াশোনা শেষে ফিরে আসেন ঢাকায়।

গাড়ি হাঁকিয়ে ছুটছেন অভিক

চ্যাম্পিয়নের নেশা

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত হওয়া একমাত্র মোটর স্পোর্টস প্রতিযোগিতা র‌্যালি ক্রসে ২০১৪ সাল থেকে অংশ নেন অভিক। ঢাকায় হওয়া সেই প্রতিযোগিতায় হয়েছেন হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু শেষবার পেছনের গাড়ি থেকে এগিয়ে ছিলেন সময়ের ব্যবধানে অনেকটাই। সেই আত্মবিশ্বাস আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রেস করার সাহস জোগায় অভিকের, ‘প্রথম দুবার মাইক্রো সেকেন্ডের ব্যবধানে প্রথম হই। কিন্তু ২০১৬ সালে যখন চ্যাম্পিয়ন হলাম, দেখি সময়ের হিসাবে আমার চেয়ে অনেক পেছনে পড়ে আছেন দ্বিতীয় রেসার। তখনই ভারতে খেলতে যাওয়ার চিন্তা করি।’

এরপর ভারতের ভক্সওয়াগন কাপে ২০১৭ সালে অংশ নিয়েই চতুর্থ হন অভিক; যা তাঁর আত্মবিশ্বাসের পালে লাগায় নতুন হাওয়া, ‘ভক্সওয়াগন অ্যামিও কাপে চতুর্থ হওয়ার পর নতুন করে অনুপ্রেরণা পাই। এরপর মাদ্রাজ মোটর রেস ট্র্যাকে খেলেছি। খুবই কঠিন ছিল ওখানে খেলা। তবে এ বছরের শুরু থেকে মনে হলো পুরোপুরি রেসে মনোযোগ দেব। রেস একটা জিততেই হবে আমাকে।’

মালয়েশীয় চ্যাম্পিয়নশিপ সিরিজের একটি পর্বে তৃতীয় সেরার পুরস্কার হাতে অভিক আনোয়ার (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত

ব্যবসা সামলে খেলা

দেশে অনুশীলনের সুযোগ নেই। তাই প্রায়ই বিদেশে চলে যান অনুশীলনের জন্য। রেসের অনুশীলনের জন্য ব্যবসাপাতি থেকেও মনোযোগ উঠিয়ে নেন। অনুশীলনের এক সপ্তাহে মুঠোফোন, ফেসবুকসহ সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান ইচ্ছা করে। তখন শুধু হোটেল থেকে রেস ট্র্যাকে যান, অনুশীলন শেষে ফিরে আসেন হোটেলে। অনুশীলনের সময় রেস ট্র্যাক থেকে কিছু উপাত্ত (ডেটা) ল্যাপটপে দিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে ল্যাপটপে বসে নিজের খেলার দুর্বলতা দেখেন। কোথায় উন্নতি করতে হবে, সেগুলো বোঝার চেষ্টা করেন।

ব্যবসা সামলে একাগ্র অনুশীলনে অংশ নেওয়ার কাজটি যে খুবই কঠিন কাজ, তা অভিকের ভাষায় স্পষ্ট, ‘আমার কার রেসিংয়ের প্রতি খুব আগ্রহ রয়েছে বলেই খেলতে পারছি। কিন্তু ব্যবসার পাশাপাশি এটা করা খুব কঠিন। কারণ, প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ির ব্যাপারে কথা বলতে হয়। ব্যাংকিং, এলসি (লেটার অব ক্রেডিট), পারচেজ দেখতে হয়।

তবু স্বপ্ন দেখা

দেশে একেবারে অপ্রচলিত খেলা ফর্মুলা রেসিং। কিন্তু এই খেলাতেও সম্ভাবনা দেখেন অভিক, ‘এটা সত্যি যে আমাদের দেশে কোনো অবকাঠামো নেই। এই দেশে দারিদ্র্যের হার বেশি। মানুষ হয়তো চিন্তা করবে, যেখানে অনেকে খেতে পাচ্ছে না, সেখানে রেস করছে। এটা নেতিবাচক দিক। কিন্তু ইতিবাচক দিক হলো যদি সত্যিই খেলার সুযোগ থাকে, তাহলে অনেক যুবক নেশায় জড়াবে না। কারণ, আমি জানি, গাড়ির প্রতি তরুণদের অনেক মায়া। গাড়ির প্রতি তখন টাকা খরচ করবে। ড্রাগসের দিকে ঝুঁকবে না। রেস করলে রাস্তায় জোরে চালানোর প্রবণতাও কমবে। চিন্তা করবে, জোরে গাড়ি চালিয়ে তো কিছু পাচ্ছি না। কিন্তু রেসে গাড়ি চালিয়ে পুরস্কার তো পাব। তখন জোরে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেবে এমনিতেই।’

বিশ্বের বুকে বাংলার পতাকা

মালয়েশিয়ায় পদক জেতার পর যেন ঘোরলাগা জগতে ছিলেন অভিক, ‘আমার তো শুরুতে বিশ্বাসই হচ্ছিল না। অনেক পরে বিশ্বাস হলো, আমি পেরেছি। নিজেকে নিজেই বললাম, দুই বছর পর অবশেষে স্বপ্ন সত্যি হলো।’ অভিকের হাতে শুরু বাংলাদেশের ফর্মুলা ওয়ান ট্র্যাকের পথচলা। কে জানে হয়তো একদিন ফর্মুলা ওয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে উড়বে লাল-সবুজের পতাকা। জীবনটাই তো গতির, এখানে থেমে থাকার কিছু নেই। অভিক যেন সেই গতিরই প্রতীক, থেমে থাকতে চান না। ছুটতে চান আরও সামনে।

তথ্যসূত্র : দৈনিক প্রথম আলো

এন্ড্রয়েড ফোন এর সমস্যা ও সমাধান!

এন্ড্রয়েড কি ?

এন্ড্রয়েড হলো স্মার্টফোনের জন্য অপারেটিং সিস্টেম, যেখানে মিডলওয়্যার ও কিছু বিল্ট-ইন এপলিকেশনও রয়েছে।

১। আমার এন্ড্রয়েড ফোন কোন কাজ করছে না

আপনি আপনার এন্ড্রয়েড ফোনটি রি-স্টার্ট করুন। এতে আপনার ফ্রিজ হয়ে যাওয়া ফোন ঠিক হতে পারে।

২। আমার স্মার্ট ফোন এর ওয়াই-ফাই কানেক্ট হয় না

এই পদ্ধতি আপনার সমস্যার সমাধান করবে। আপনি আপনার এন্ড্রয়েড ফোন এ wi-fi > Settings > Menu > Advance  এবং stay connected সিলেক্ট করুন। রেঞ্জ এর মধ্যে থাকলে আপনার এন্ড্রয়েড দিয়ে ওয়াই-ফাই কানেক্ট হয়ে যাবে।

৩। মেমরিতে পর্যাপ্ত কাজ করা যায় না

এটি এন্ড্রয়েড এর একটি গুরুত্তপুর্ন সমস্যা। বিভিন্ন কেস (cache) ফাইল ও অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ আপনার ফোনের মেমরির স্পেস কমিয়ে ফেলে। আপনি “কেস ক্লিনার” বা “ক্লিন মাস্টার” নামক এন্ড্রয়েড অ্যাপ ব্যবহার করে ফোন ক্লিন করতে পারবেন।

এতে আপনার ফোন এর মেমরি স্পেস কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও আপনি আপনার ফোন মেমরিতে ইন্সটল করা অ্যাপ গুলি এক্সটার্নাল মেমরি কার্ড এ ট্রান্সফার করে মেমরি স্পেস বৃদ্ধি করতে পারেন।

৪। আমার এসডি কার্ড পাচ্ছে না

এসডি কার্ড এ কোন ধরনের সমস্যা রয়েছে। আপনি ডেস্কটপ কম্পিউটার বা ল্যাপটপ এর মাধ্যমে এসডি কার্ড রি-ফরম্যাট করুন। এরপর আপনার ফোন থেকে মেমরি কার্ডটি আবার ফরম্যাট করুন।

৫। সুর্য্যের আলোতে ফোন এর স্ক্রিন দেখতে সমস্যা হয়

আপনি ফোনের স্ক্রিন এর উজ্জলতা বৃদ্ধি করতে পারেন। অথবা, অ্যান্টি-গ্লেয়ার স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার করে সুর্য্যের আলোতেও সহজেই স্ক্রিন দেখতে পারবেন।

৬। আমি কিভাবে ফোনের অ্যাপস রিমুভ করব?

আপনি Settings > Applications > Manage Applications এ প্রবেশ করুন এবং আপনি যে অ্যাপটি আন-ইন্সটল করতে চান সেটি সিলেক্ট করে আন-ইন্সটল করুন।

https://play.google.com/store/apps?hl=en

৭। ফোনের স্ক্রিন ভেঙ্গে গেছে!! আমি কি নতুন ফোন কিনব?

ভাঙ্গা স্ক্রিন পরিবর্তন করে ঠিক করা যায়। বিভিন্ন মোবাইল সার্ভিসিং এর দোকানে অথবা অনলাইন শপ এ আপনার ফোনের স্ক্রিন খুজে দেখুন। নতুবা একটি নতুন ফোন কিনুন।

৮। পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত রাখা

আপনি Settings > Security > Set up screen lock এবং প্যাটার্ন সিলেক্ট করে আপনার প্যাটার্ন প্রবেশ করান। প্যাটার্ন লক অন্যান্য পাসওয়ার্ড থেকে দ্রুত ও সিকিউর।

৯। আমার লোকেশন ম্যাপ এ সঠিক ভাবে দেখাচ্ছে না

আপনি Settings > Location এ Use GPS satellites সিলেক্ট করুন। এতে আপনাকে সঠিক ন্যাভিগেটিং প্রদান করবে।

১০। কিভাবে আমার এন্ড্রয়েড ফোন এর সকল তথ্য ডিলিট করব

আপনি Settings > SD & Phone Storege > Factory Data Restore এ প্রবেশ করুন। অবশ্যই, এর আগে আপনার প্রয়োজনীয় ডাটা সংরক্ষন করে নিন। কারন এর ফরম্যাট দ্বারা ফোনের সকল কিছু ডিলিট করা হয়।

১১। আমার ফোনটি পানিতে পরে গেছে

খুব দ্রুত ফোনের ব্যাটারি খুলে ফেলুন এবং ফোনের সকল পার্টস খুলে ফেলুন। প্রায় ৭২ ঘন্টা ফোনটি শুষ্ক স্থানে রাখুন। এরপর আপনার ফোনটি চালু করুন। এতে আপনার ফোন ঠিক হয়ে যেতে পারে।

১২। আমার এন্ড্রয়েড স্মার্ট ফোনের লিখা বড় করতে পারব?

মেসেজ সেটিং এ প্রবেশ করে Set test size  অপশন এ গিয়ে লিখার সাইজ বড় করে দিন।

১৩। আমি কি এন্ড্রয়েড এপস  অটোমেটিক্যালি আপডেট করতে পারব?

আপনি Google Play > Menu > My Apps এ প্রবেশ করে অ্যাপ সিলেক্ট করে অপশন থেকে অটো আপডেট চালু করে দিন।

১৪। আমি আমার সার্চ করা লিস্ট গোপন রাখতে চাই

আপনি www.google.com/history এ আপনার এন্ড্রয়েড ব্রাউজার দিয়ে প্রবেশ করুন এবং লগিন করুন। এখানে আপনি আপনার আগের সার্চ করা হিস্টোরি রিমুভ করতে পারবেন এবং ভবিষ্যতে সার্চ গুলো যেন সেভ না করে তা সিলেক্ত করতে পারবেন।

১৫। কিভাবে আমি স্ক্রিনশট নিব?

কিছু কিছু স্মার্ট ফোনে ব্যাক কী ও হোম বাটন একত্রে প্রেস করলে স্ক্রিন ক্যাপচার হয়। সকল স্মার্ট ফোনের জন্য এই পদ্ধতিটি নয়।

১৬। কিছু অ্যাপস এসডি কার্ড এ ইন্সটল হয় না

আপনি আপনার অ্যাপস গুলো ব্যবহৃত এসডি কার্ড এ ট্রান্সফার করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে অ্যাপটি ইন্সটল করার পর Settings > Manage Applications এ গিয়ে ফোন মেমরি থেকে এসডি কার্ড এ স্থানান্তর করতে হবে।

১৭। কিভাবে আমার ফোনের ভাষা পরিবর্তন করব?

আপনি Settings > Language & Keyboard এ গিয়ে আপনার ভাষাটি সিলেক্ট করুন।

১৮। আমি কি আমার ফোনের প্রি-ইন্সটল করা অ্যাপস রিমুভ করতে পারব?

হ্যাঁ, আপনি আপনার ফোনের প্রি-ইন্সটল করা অ্যাপস রিমুভ করতে পারবেন। এর জন্য রুটিং ডিভাইস এর প্রয়োজন এবং  রুট আন-ইন্সটলার নামে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করুন।

এর সাহায্যে আপনি ফোনের বিভিন্ন অ্যাপস আন-ইন্সটল করতে পারবেন এবং মেমরি স্পেস বৃদ্ধি করতে পারবেন।

১৯। আমি কি এন্ড্রয়েড ফোনের স্পীড বাড়াতে পারব?

এর জন্যে অনেক ধরনের অ্যাপস পাওয়া যায় যেমন- সেট সিপিইউ। যা প্রসেসর এর অভারলকিং দূর করে স্পীড বৃদ্ধি করে। এটি প্রসেসর কে স্লো করে মেমরি সেভ করে।

এটি খুব সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত। নয়ত, প্রসেসর এর ম্যাক্সিমাম স্পীড এর পাশাপাশি আপনার ফোনের প্রসেসর ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে।

২০। আমার ফোন ব্যাকআপ করার সঠিক পদ্ধতি কি?

এন্ড্রয়েড ফোন ব্যাকআপ এর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। Titanium Backup PRO হল সব

চেয়ে উত্তম পন্থা। এর সাহায্যে আপনি এন্ড্রয়েড ফোনের সবকিছু ব্যাকআপ করতে পারবেন। এই ব্যাকআপ ফাইল আপনার ই-মেইল অথবা ড্রপবক্স এ সংরক্ষন করতে পারবেন।

২১। কিভাবে আমি আমার ফোনে ভাইরাস এটাক প্রতিরোধ করব?

আপনি যেকোনো অ্যান্টি-ভাইরাস ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন। যেমন- ক্যাস্পারস্কি মোবাইল সিকিউরিটি অথবা এভিজি যা আপনার ফোনে ভাইরাস আক্রমন থেকে সঠিক নিরাপত্তা প্রদান করবে।

২২। আমার ফোনের সাউন্ড খুবই কম

যদি আপনার ফোনের সাউন্ড খুব কম থাকে, তবে আপনি এন্ড্রয়েড মার্কেট থেকে AudioBoost নামের অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন। এটি আপনার ফোনের সাউন্ড ৩০% বৃদ্ধি করবে।

২৩। লাইভ ওয়ালপেপার এর কারনে ব্যাটারির চার্জ নস্ট হয়

এর সহজ সমাধান হল আপনি স্ট্যাটিক ওয়ালপেপার ব্যবহার করুন।

২৪। ফোনের ঘড়ির সময় ঠিক থাকে না

ফোনের সময় অটোমেটিক না হওয়ার কারনে সময় ঠিক থাকে না। যদি নেটওয়ার্ক ক্লক স্লো হয়, তবে ফোনের সময় স্লো হবে। এর জন্য Settings > Date & Time > Automatic  সিলেক্ট করে দিন। এতে নেটওয়ার্কের সাথে সময় ঠিক হয়ে যাবে।

২৫। আমি কি অপ্রয়োজনিয় কল ব্লক করতে পারব?

যদি আপনার ফোনের নেটওয়ার্ক এই সুবিধা প্রদান না করে তবে আপনি Extrem Call Blocker Droid  ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ইনকামিং কল ব্লক করতে পারে কিন্তু এটি সস্থা নয়। এছাড়াও আপনি কল ব্লক এর অন্যান্য অ্যাপস ব্যবহার করতে পারেন।

২৬। আমার ফোন মাঝে মাঝে স্লো করে। এর জন্য কোন টুলস বা সাহায্য রয়েছে??

আপনার ফোন ফাস্ট করতে সকল অপ্রয়োজনিয় অ্যাপস এবং ডাটা রিমুভ করে ফেলুন। এছাড়াও আপনি System Tyner Pro ব্যবহার করে এই কাজটি করতে পারবেন। এটি আপনার ফোনের বিভিন্ন টাস্ক ও অযাচিত ফাইল রিমুভ করে ফোনের সর্বাধিক পারফোমেন্স বৃদ্ধি করে।

২৭। আমার ফোন চুরি হয়ে গেছে। আমি কি এটি ট্র্যাক করতে পারব??

আপনি একটি থার্ড পার্টি অ্যাপ ইন্সটল করে আপনার ফোনটি ট্র্যাক করতে পারবেন। PhoneLocator Pro এর দ্বারা জিপিএস এর মাধ্যমে ফোন ট্র্যাক করা সম্ভব হয়।

২৮। কেন আই-টিউন্স এন্ড্রয়েড ডিভাইস এ ব্যবহার করা যায় না?

আই-টিউন্স শুধুমাত্র অ্যাপল এর ডিভাইস এর জন্য তৈরি করা হয়েছে। আপনার এন্ড্রয়েড ডিভাইস এ ফিজিক্যাল কানেকশন রয়েছে, তাই আই-টিউন্স এর প্রয়োজন নেই।

২৯। আমি কিভাবে ফোন ফ্রিজিং অবস্থায় অ্যাপ ক্লোজ করব??

এর জন্যে আপনি Settings > Application > Maneg applicatios এ গিয়ে যেই অ্যাপটি ক্লোজ করতে চান, সেটি সিলেক্ট করে Force Stop এ ট্যাপ করুন। যদি অ্যাপটি কোন মিসবিহেভ করে তবে আন-ইন্সটল করে আবার ইন্সটল করুন।

৩০। আমি কি খুব দ্রুত রানিং অ্যাপস ক্লোজ করতে পারব??

আপনি ডিফল্ট টাস্ক ম্যানেজার এন্ড্রয়েড ব্যবহার করে রানিং অ্যাপস ক্লোজ করতে পারবেন। এছাড়াও আপনি অ্যাপস এর সকল ম্যানেজমেন্ট এর কাজ করতে পারবেন।

৩১। আমি যে ওয়ার্ড গুলো ব্যবহার করতে চাই অটোকারেক্ট কেন তা জানে না?

অটো কারেক্ট সকল ওয়ার্ড জানে না। কিন্তু আপনি ডিকশনারি তে ওয়ার্ড খুব সহযেই যুক্ত পারবেন। যখন আপনি টাইপ করবেন, তখন + চিহ্ন দেখতে পারবেন তাতে ট্যাপ করুন। এতে টাইপকৃত ওয়ার্ড ডিকশনারী তে যুক্ত হয়ে যাবে।

৩২। কী-বোর্ড পরিবর্তন করা

আপনি ১২৩ প্রেস করে হোল্ড করে রাখুন,  এতে আপনি আপনার ফোনে ইন্সটল করা কীবোর্ড এর লিস্ট দেখতে পারবেন। সেখান থেকে একটি সিলেক্ট করুন এবং কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন।

৩৩। ফোন চার্জ দেওয়ার সময় স্ক্রিন অফ হয়ে যায় কেন?

আপনি Settings > Application > Development এ গিয়ে Stay awake সিলেক্ট করে দিন। এতে চার্জিং এর সময় স্ক্রিন চালু থাকবে।

৩৪। আমি ক্রয় করা অ্যাপ পুনরায় ইন্সটল করতে পারব?

আপনি গুগল প্লে থেকে ক্রয়কৃত অ্যাপটি পুনরায় ইন্সটল করতে পারবেন। আপনি My Market Account এ প্রবেশ করুন। সেখান থেকে আপনি ক্রয়কৃত অ্যাপটি সিলেক্ট করে ইন্সটল করুন।

গুগল প্লে পুনরায় ইন্সটল এর জন্যে কোন চার্জ দাবি করবে না।

৩৫। আমার এন্ড্রয়েড ফোনটি লেটেস্ট ভার্সন কিনা কিভাবে কা জানতে পারব???

আপনি Settings> About Phone > System software updates > Check now এ ক্লিক করুন। যদি কোন নতুন আপডেট থাকে বা আপডেট আপনার ফোনে ইন্সটল করা রয়েছে তবে তা আপনাকে নোটিশ প্রদান করবে।

নকল চার্জার বুঝবেন কিভাবে?

অনলাইন থেকে নকল ইলেকট্রিক গেজেট কেনা নিয়ে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল।এতে জানা গেছে, চারশ’ নকল চার্জারের মধ্যে মাত্র তিনটিতে বৈদ্যুতিক শক ঠেকাতে যথেষ্ট প্রতিরোধোক ব্যবহার করা হয়।যার ফলে চার্জার ব্যবহারকারীর অনেকে মারাত্মক ঝুঁকিতে আছেন বলে সতর্ক করেছেন তদন্তকারীরা।অ্যামাজনে এই সময়ে ‘নকল’ গেজেট বিক্রির ‘হিড়িক’ পড়েছে বলে অ্যাপলের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, এর পর থেকে এই পরীক্ষা চালানো হয় বলে জানা গিয়েছে।

যেভাবে চিনবেন ঝুঁকিপূর্ণ নকল চার্জার

প্লাগ পিন:

কোনো সকেটে সুইচ চালু করে আর প্লাগটি কোনো ডিভাইসের সঙ্গে কানেক্ট না করে, প্লাগের পিন সকেটে ঢুকানোর পর যদি দেখা যায় তা সঠিকভাবে খাপ খাচ্ছে না, তাহলে পিনগুলো ভুল আকারে বানানো হয়েছে বলে ধরা যেতে পারে। পিন-এর ধার আর চার্জারের ধারের মধ্যে অন্তত ৯.৫ মিলিমিটার জায়গা থাকতে হবে।

মার্কিং:

উৎপাদনকারী সংস্থাটির ব্র্যান্ড নাম বা লোগো, মডেল, ব্যাচ নাম্বার আর নিরাপত্তা নির্দেশক চিহ্ন যাচাই করতে হবে। যদিও এগুলো সহজেই নকল করা যায়, তা নিয়েও সতর্ক থাকতে হবে।

সতর্কতা ও নির্দেশনা:

ইউজারদের নির্দেশনায় শর্ত আর ব্যবহারের নীতিমালা দেওয়া থাকতে হবে।

এগুলোর মধ্যে কীভাবে নিরাপদে চার্জার ব্যবহার করতে হবে- এমন নিরাপত্তামূলক নির্দেশনা ও ব্যবহার শেষে তা নষ্ট করার উপায় বলা থাকতে হবে।

যেভাবে অ্যাপলকে দেউলিয়া হবার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল মাইক্রোসফট

অ্যাপল বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সফল একটি কোম্পানি। তাদের পণ্যের সর্বব্যাপী চাহিদার পাশাপাশি রয়েছে একটি বিশ্বস্ত ভোক্তাশ্রেণী। তাই আমেরিকান শেয়ার মার্কেটে প্রথম ট্রিলিয়ন ডলার কোম্পানি হিসেবে অ্যাপলের নাম উঠে আসা একেবারেই বিস্ময়কর কোনো বিষয় নয়। কিন্তু আজ থেকে ২০ বছর আগে অ্যাপল একসময় দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। সবচেয়ে মজার কথা হলো, এই অবস্থা থেকে অ্যাপলকে তখন স্টিভ জবস বাঁচাতে পারেননি, বরং তখন অ্যাপলকে বাঁচায় তাদেরই ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী মাইক্রোসফট!

নব্বইয়ের দশকের চিত্র

১৯৯৭ সালের দিকে অ্যাপল শুধুমাত্র কম্পিউটার প্রস্তুতকারক কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত ছিল, কেননা তখনও স্মার্টফোন আবিষ্কার হয়নি। অ্যাপল কোম্পানির নামই ছিল তখন ‘অ্যাপল কম্পিউটার’। তাদের কম্পিউটারগুলোর বাজারদর ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি, যার কারণে ব্যবহারকারীদের কাছে অ্যাপলের জনপ্রিয়তা তেমন ছিল না। অর্থাৎ সেসময়ে কোম্পানিটি ক্রমেই নিচের দিকে নেমে যাচ্ছিল।

১৯৯০ এর দিকে বেশিরভাগ কম্পিউটার ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হতো। কম্পিউটারগুলোর মূল ভিত্তি ছিল বড় বড় কোম্পানিগুলোর প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার যাতে সুন্দরভাবে চালানো যায় সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম থাকা। অর্থাৎ আপনি যে সফটওয়্যারটি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে কম্পিউটারে চালাতে চান, সেজন্য কম্পিউটারে যদি প্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম তৈরি করা না থাকে, সেক্ষেত্রে বড় বড় কোম্পানিগুলোর জন্য আপনার কম্পিউটার কোনো উপকারে আসবে না।

১৯৯৭ সালে মাইক্রোসফটের শেয়ার বাজারদর অনেক বেশি ছিল এবং প্রায় সকল ধরনের সফটওয়্যার উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহারের উপযোগী করে তৈরি করা হতো। একটি কথা বলে রাখা ভাল যে, এই সময়ে স্টিভ জবস অ্যাপলের দায়িত্বে ছিলেন না। ১৯৮৫ সালে অ্যাপলের পরিচালনা পর্ষদ তাকে কোম্পানি থেকে বের করে দেয়। ১৯৯৭ সাল থেকে ক্রমেই অ্যাপলের বিক্রি কমতে থাকে এবং পাশাপাশি কমতে থাকে অ্যাপলের শেয়ারের বাজারদর। বার বার কোম্পানির সিইও পরিবর্তন করার পরও যখন অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না, তখনই অ্যাপল স্টিভ জবসকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিল।

১৯৯৮ সালে অ্যাপলের কম্পিউটার; Image Courtesy: telegraph.co.uk

১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্টিভ জবস ‘নেক্সট’ নামক কোম্পানিটি কিনে নেন। অ্যাপল ছেড়ে যাওয়ার পর তিনি নিজেই এই কোম্পানি শুরু করেন। কিন্তু অ্যাপলের অর্থনৈতিক অবস্থা তখন এতটাই শোচনীয় ছিল যে ‘নেক্সট’ কেনার জন্য তিনি কোনো নগদ অর্থ পাননি, পেয়েছিলেন অ্যাপলের ১.৫ মিলিয়ন মূল্যের শেয়ার। এতকিছুর পরও অ্যাপলের অস্তিত্ব সংকট প্রকট হয়ে উঠল জুলাইয়ের শেষের দিকে, কারণ তখন অ্যাপলের ব্যাংক একাউন্টে মাত্র ৯০ দিনেরও কম সময় চলার মতো অর্থ অবশিষ্ট ছিল। তিন বিলিয়ন ডলার মূল্যের কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও মাত্র এক বছরেই কোম্পানিটি প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

যে ঘোষণা সবাইকে হতভম্ব করে দেয়

আগস্ট মাসের ৭ তারিখ এক কনফারেন্সে স্টিভ জবস সবচেয়ে বড় বিস্ময়ের জন্ম দেন। তিনি সেই কনফারেন্সে অ্যাপলের সাথে মাইক্রোসফটের অংশীদারিত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। “যে কোম্পানি অ্যাপলকে অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দিয়েছে, তার সাথেই কীভাবে আবার অংশীদারিত্ব?“- এটাই  ছিল সাধারণ মানুষের কাছে কোটি টাকার প্রশ্ন। তিনি কনফারেন্সে বলেন,

আজ আমি আমাদের প্রথম এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন অংশীদারের কথা বলব, যে হলো মাইক্রোসফট! অ্যাপল মাইক্রোসফটের ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্রাউজারকে তাদের ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের ডিফল্ট ব্রাউজার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। পাশাপাশি মাইক্রোসফট অ্যাপলের ১৫০ মিলিয়ন মূল্যের শেয়ার বাজারদরে কেনার ঘোষণা দিয়েছে। এই শেয়ারগুলো হচ্ছে নন ভোটিং শেয়ার। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, মাইক্রোসফট তাদের অফিস পাঁচ বছরের জন্য অ্যাপলকে অবাধে ব্যবহারের সুযোগ করে দেবে।

Image Courtesy: YouTube

এখানে একটা বিষয় হচ্ছে- মাইক্রোসফট যে শেয়ারগুলো কিনেছে, সেগুলো ছিল নন-ভোটিং শেয়ার। অর্থাৎ মাইক্রোসফট অ্যাপলের অংশীদারিত্বে যাচ্ছে না, বরং তাদেরকে তহবিল দিচ্ছে শুধুমাত্র। সফটওয়্যারগুলোর অ্যাপলের ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে ব্যবহার-উপযোগীতা না থাকাই মূলত অ্যাপলকে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে দিচ্ছিল। আর তখনই বিল গেটস ম্যাকিনটোশের এই সফটওয়্যারজনিত সমস্যা দূর করেন। কিন্তু কেন তিনি এটা করলেন? যেখানে মাইক্রোসফটের হাতে তাদেরই নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর মৃত্যু হত, সেখান থেকে কেন বিল গেটস অ্যাপলকে বাঁচালেন?

কেন অ্যাপলকে সাহায্য করা?

এখন আমরা বিল গেটসকে একজন উদার এবং দানশীল ব্যক্তি হিসেবেই জানি। কিন্তু আজ থেকে ৩০ বছর আগে তিনি এমন ছিলেন না। ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য তিনি যেকোনো ধরনের উপায় গ্রহণ করতে ইচ্ছুক ছিলেন, যদিও সেটা অন্য কারো জন্য খারাপ কিছু বয়ে আনে।

ব্যবসায় সফলতার জন্য গেটসের গৃহীত পদক্ষেপগুলো মাইক্রোসফটকে সফলতা এনে দেয়। মাইক্রোসফট এতটাই সফল ছিল যে এটি তখন আমেরিকান ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের উচ্চপদস্থ নীতি নির্ধারকদের চোখে পড়ে। ১৯৯৩ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে একটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ১৯৯৮ সালে আমেরিকান ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস ‘শারমান এন্ট্রি-ট্রাস্ট অ্যাক্ট’ ভঙ্গের জন্য মাইক্রোসফটের নামে মামলা দায়ের করে। তারা অভিযোগ করে, মাইক্রোসফট একচেটিয়া বাজার দখলের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা দমন করতে চাচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে, মাইক্রোসফট সত্যিকার অর্থেই চাচ্ছিল তাদের তৈরি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্রাউজারটি যুক্ত করে দিয়ে ওয়েব ব্রাউজার ব্যবসায় একচেটিয়া বাজার দখল করতে।

মাইক্রোসফটের একচেটিয়া মনোভাব

তখনকার সময়ে ওয়েব ব্রাউজার ফ্রি ছিল না। নেটস্কেপ নেভিগেটর, অপেরার মতো ওয়েব ব্রাউজারগুলো দোকান থেকে কিনে নিতে হত। এখন মাইক্রোসফট চাচ্ছিল তাদের ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্রাউজারকে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে যুক্ত করে দিতে, যাতে করে ব্যবহারকারীদের আলাদা কোনো ওয়েব ব্রাউজার কিনতে না হয়। আর এভাবেই মাইক্রোসফট বাজারে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করবে।

মাইক্রোসফটের জয়

দীর্ঘদিনের টানা আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে তার কোম্পানিটি ভেঙে পড়ুক তা বিল গেটস একদমই চাচ্ছিলেন না। অ্যাপলকে সাহায্য করার মাধ্যমে বিল গেটস প্রমাণ করতে চাইছিলেন যে তারা একচেটিয়া ব্যবসায় বিশ্বাসী নয়, বরং তারা প্রতিযোগিতাকে সব সময় সমর্থন করে। শুনানির কিছু অংশ তুলে ধরা যাক।

প্রশ্ন: আপনি কি রিয়েল নেটওয়ার্ক এর কোন প্রতিনিধির সাথে কী ধরনের পণ্য তাদের বিতরণ করা উচিত বা উচিত নয় এ ব্যাপারে কোনো আলোচনা করেছিলেন?
বিল গেটস: (প্রায় অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর) না।
প্রশ্ন: এটা একটা প্রোগ্রাম, যা সাধারণত হিসাব-নিকাশের কাজ অথবা মজুদপণ্যের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
বিল গেটস: আমি মনে করি সংজ্ঞায়নটা অস্পষ্ট।
প্রশ্ন: যতটুকু সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ততটুকু কি যথার্থ নয়?
বিল গেটস: যথার্থ হলেও আমি মনে করি এটা এখনও অস্পষ্ট।

আদালতে বিল গেটস; Image Courtesy: New York Times

এভাবেই আদালতে শুনানির সময় বিল গেটস তার উত্তরে যথাসম্ভব কৌশলী থাকার চেষ্টা করেন, যাতে করে জুরি বোর্ড সহজে কোনো কিছু বুঝতে না পারে। তিনি জানতেন, অ্যাপলকে সাহায্য করে তিনি প্রকৃত অর্থে মাইক্রোসফটকেই বাঁচিয়ে দিয়েছেন। অ্যাপলকে সাহায্য করে মাইক্রোসফট এটাই বোঝাতে চাচ্ছিল যে, তারা একচেটিয়া কোনো কোম্পানি নয়। তিন বছর পর আদালত মাইক্রোসফটকে সামান্য শাস্তি দিয়ে মামলা থেকে মুক্তি দেয়।

নন-ভোটিং শেয়ার রহস্য

আগেই বলা হয়েছে, মাইক্রোসফট অ্যাপলের ১৫০ মিলিয়ন মূল্যের নন-ভোটিং শেয়ার বাজারদর ক্রয় করে। মামলা থেকে মুক্তির সাথে সাথেই বিল গেটস তার নন-ভোটিং শেয়ারগুলোকে সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর করেন। সব মিলিয়ে বিল গেটস অ্যাপলের ১৮.২ মিলিয়ন মূল্যের শেয়ার পান, যা তিনি ২০০৩ সালে বিক্রি করে দেন। যখন বিল গেটস শেয়ারগুলো বিক্রি করেন, তখনও অ্যাপলের শেয়ারমূল্য অনেক কম ছিল।

২০০৩ সালে অ্যাপলের শেয়ারমূল্য; Image Courtesy: YouTube

এরপর থেকে অ্যাপলের শেয়ারের বাজারমূল্য ২০০৫ সালে ২:১ অনুপাতে এবং ২০১৪ সালে ৭:১ অনুপাতে বেড়ে যায়। ২০১৯ সাল পর্যন্ত অ্যাপলের প্রতিটি শেয়ারের মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ২২৭ ডলার, সেই হিসেবে বিল গেটসের বিক্রি করে দেওয়া শেয়ারের মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ৫৭ বিলিয়ন ডলারে!

যদিও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য অর্জন করার জন্য বিল গেটস অ্যাপলকে সাহায্য করেছিলেন, তারপরও তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো যায়। নতুবা অ্যাপল নামের এই ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানিটি হয়তো দেউলিয়া হয়ে যেত।